উনিশ_শতকের_ডাকপিয়ন ,২য়_বিলি_করা_চিঠি
প্রিয় জোভান,
আমার চিঠি পেয়ে অবাক হওয়ার আগেই আমি বলছি যে,মন ভালো ছিল না তাই আজ এই অলস ছেলেটাও এতো বড় চিঠি লিখতে বসেছে।আসলে,আমার জীবন নদীর এই কিনারায় সুখ-দুঃখের অনুভূতির প্রকাশ করার সঙ্গী তো একমাত্র তুই-ই আছিস।আর তাই আজকের এই চিঠি লিখা কারণ নিজেকে একদম ই প্রকাশ করতে না পারলে, দম বন্ধ হয়ে মারা যাব যে…
আসলে আজ আমার খুব মন চেয়েছে, সব দুঃখগুলোকে এক খামে ভরে আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলোকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসতে।এক পাতায় হয়তো সম্পুর্ণ হবেনা আজকের কথা,তাই কয়েক পাতারই সাহায্য নিতে হবে সম্ভবত।জানিস,দিন দিন আমার জীবনটা যেন একটা ফুটবল ম্যাচ প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে যাচ্ছে…
তুই তো জানিস ই,একদম শুরুর সময় থেকে অল্পস্বল্প লিখালিখি শুরু করেছি।সময়ের সাথে ঝোঁক বেড়েই চলছিল।প্রথমে মানুষ সেসব লিখার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও এখন যেন মন্তব্য অংশটা পুরোটাই মরুভূমি।আমার বেশিরভাগ লিখাই কেউ পড়ে না।
কারণ?
বড় লিখা পড়ার ধৈর্য্য কারই বা আছে।সেইসাথে,আমি যে কোনো সাহিত্যিক বা সুপরিচিত কারো সন্তান নই যে, আমায় অনেক মানুষ চিনবে।আবার,আমি মেয়েও নই যে, “ইশ” লিখে রিপ্লাই দিব যাতে ডজন ডজন মানুষ “তুই একটা জেম” লিখে কমেন্ট করবে।সেইসাথে, কোনো গ্রুপের অ্যাডমিনও নই আবার অন্যদের পোস্টে কমেন্ট করেও বেড়াই না। তাহলে তুই ই বল, কেনোই বা অন্যরা আমার লিখা পড়বে!উত্তর তো এটাই,
“আমি যে বিশেষ কেউ নই”
ফলাফলঃ হতাশা (১) – সফলতা (০)
মধ্যবিরতি তে নতুন করে বাঁচার কিছু উপায় খুঁজে বেড়াই।আসলে প্রতিটি মানুষই অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আকাঙ্খা রাখে।আমিও তার ব্যতিক্রম নই।যখন লিখাতে সন্তুষ্ট করতে পারলাম না,পারলাম না কারও পছন্দের ব্যক্তি হতে। তখন চেষ্টা করলাম নানান কিছু করার!কিন্ত এবারও অসফল। কারণ,
ওই যে,একই উত্তর…
“আমি যে বিশেষ কেউ নই”
ফলাফলঃ হতাশা (২) – সফলতা (০)
মধ্যবিরতির পর যখন জেতার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে যখন নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলাম না,তখনও দম হারাইনি।কারণ, আশা ছিল বন্ধুদের কাঁধ পাব মাথা রাখার জন্য।কিন্তু তা হলো কই? সফল বন্ধুদের কাঁধও সময়ের সাথে উঁচু হতে থাকল।শুধু কি তাই?যেসব মানুষের দেওয়া কষ্ট থেকে রেহাই পেতে বন্ধুদের কাঁধ খুঁজছিলাম, বন্ধুরা আজ তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপরেই উঠতে থাকল।তবুও শেষ মূহুর্তে উল্টো দোষ আমারই হলো যে, আমিই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারিনি ওদের সাথে।
ফলাফলঃ হতাশা (৩) – সফলতা (০)
জীবনের মায়া যখন শেষপ্রান্তে উঠে যেতে চেয়েছিল,হতাশার সাথে লড়াই করার মনোবল হারিয়ে ফেলছিলাম,হাসিখুশি থাকার বদলে ‘ইন্ট্রোভার্ট’ শব্দের সাথে নিজেকে মিশিয়ে ফেলছিলাম। ঠিক তখনই অতিরিক্ত সময়ের বাঁশির মতো মনের মাঝে আশার বীজ বুনে গেছে, জেতার শেষ আশাটা ধরে থাকতে বলছে,একজন মুসলিম হিসেবে আবারও ধৈর্য রেখে উঠে দাঁড়াতে বলছে সূরা বাকারার সেই ১৫৫ নম্বর আয়াত,
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।”
ফলাফলঃ হতাশা (৩) – সফলতা (০)
***তবে হাতে রয়েছে ম্যাচের অতিরিক্ত সময় আর সাহায্যের জন্য পাশে আছে সর্বোত্তম পরীকল্পনাকারী বা কোচ মহান আল্লাহ তা’য়ালা…
আজ আর নয়,এতোটুকুই বলতে চেয়েছিলাম রে।
এইতো আমার জীবনের গল্প…হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি, জানিনা কতটুকু সফল হব।তবে আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে যে,তিনি নিশ্চয়ই আমায় সাহায্য করবেন।কারণ,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।” [সূরা ত্বলাক- ৩]
ইতি
সিয়াম
লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি